New Gadgets, Smartphone and Software Review

Thursday, November 30, 2023

রোজার নিয়ত ও ফজিলত

 রোজা বা রোযা হচ্ছে ফার্সী শব্দ আরবিতে যাকে বলা হয় সাওম। সাওমের বহুবচন হচ্ছে সিয়াম।  এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। ইবাদতের নিয়মে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে পানাহার ও কোনো পাপকার্য, সহবাস বা যেকোন রকমের যৌন মিলন থেকে বিরত থাকাই সিয়াম সাধনা বা রোজা। এই রোজা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে। 

ফিলিস্তিন, ইহুদী ও হামাসের নির্ভেজাল বাস্তবতা 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

 

রোজার-নিয়ত

রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ 

"হে যারা ঈমান এনেছ তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাক্ওয়া অবলম্বন করতে পার"। (সূরা বাকারা: ১৮৩) 

 এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে আমাদের পূর্ববর্তী যারা ছিলো তারা রোজা রাখত। আমরা হচ্ছি মুসলমান - আমাদের পূর্ববর্তী কারা? হিন্দু, বোদ্ধ, ইহুদী , খৃস্টান, জৈন নাকি অন্য কোন ধর্মের অনুসারী? 

হযরত আদম ( আঃ ) ত্রিশ দিন রোজা রেখেছেন আর হযরত নূহ আঃ রোজা রেখেছেন এবং হযরত দাউদ ( আঃ) এক দিন বিরতি দিয়ে দিয়ে সারা বছরই রোজা রাখতেন। 


রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন:

হযরত নূহ (আ.) ১ লা শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ছাড়া সারা বছর রোযা রাখতেন।


— ইবনে মাজাহ ১৭১৪ (সনদ দুর্বল)


আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে মক্কার কুরাইশগণ আশুরার দিন অর্থাৎ ১০ই মুহরমের দিন রোজা রাখত , ওদিন তারা কাবা ঘরের গিলাফ পরিবর্তন করত। মদিনার ইহুদীরাও সপ্তম মাসের ১০ম দিনে রোজা রাখত। 

 

রোজার শর্ত 

আপনি ফরজ বা নফল অথবা সুন্নত যে রোজাই রাখেন না কেনো নিচের ৪টি শর্ত না মিললে রোজা হবে না । 

  1. মুসলিম হওয়া
  2. বালেগ হওয়া
  3. অক্ষম না হওয়া
  4. ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী।  


রোজার ফরজ 

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে রোজার ফরজ কয়টি? তাদের জ্ঞ্যাতার্থে জানাচ্ছি যে- রোজার ফরজ ৩টি । যথা-

  1. রোজার নিয়ত করা
  2. সকল ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা
  3. স্ত্রী সহবাস বা যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা। 


রোজার প্রকারভেদ

আমরা অনেকেই জানিনা যে রোজা বা সাওম কয় রকমের। আপনারা যারা জানেন তাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ আর যারা জানেননা জেনে নিন। রোজা পাঁচ প্রকারের , যেমন

  1. ফরজ রোজা
  2. ওয়াজিব রোজা
  3. মুস্তাহাব রোজা
  4. সুন্নত রোজা
  5. নফল রোজা 

রোজা ভঙ্গ হলে করনীয়

বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট। কাফফারা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে।

রোজার কাফফারা

রোজার কাফফারা আদায়ের জন্য ৩টি বিধান আছে, যথা-

  1. একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজার মাঝে কোনো একটি ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
  2. যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয় তবে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খাওয়াতে হবে। কেউ অসুস্থতাজনিত কারণে রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেটভরে খাওয়াতে হবে।
  3. গোলাম বা দাসী আজাদ করে দিতে হবে।


যেসব কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা যাবে কিন্তু পরে কাজা করতে হয় তা হচ্ছে


  • মুসাফির অবস্থায়
  • রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে
  • মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে
  • এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে
  • শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে
  • কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে।
  • মহিলাদের মাসিক হায়েজ-নেফাসকালীন রোজা ভঙ্গ করা যায়


যেসব কারণে শুধু কাজা আদায় করতে হয়


  • স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার কারণে যদি বীর্যপাত হয়
  • ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে
  • পাথরের কণা, লোহার টুকরা, ফলের বিচি গিলে ফেললে
  • ডুশ গ্রহণ করলে
  • বিন্দু পরিমাণ কোন খাবার খেলে তবে অনিচ্ছাকৃত ভাবে বা মনের ভুলে খেলেও রোজা ভাংবে না তবে মনে আসা মাত্রই খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে
  • নাকে বা কানে ওষুধ দিলে (যদি তা পেটে পেঁৗছে)
  • মাথার ক্ষতস্থানে ওষুধ দেওয়ার পর তা যদি মস্তিষ্কে বা পেটে পেঁৗছে
  • যোনিপথ ব্যতীত অন্য কোনোভাবে সহবাস করার ফলে বীর্য নির্গত হলে



রমজানের রোজা পালনের জন্য কিছু আমল গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য রয়েছে বিশেষ নিয়ত ও দোয়া। চলুন জেনে নেই সেহেরি, ইফতার, তারাবিহ, রোজার নিয়ত ও দোয়া: 

সেহরির নিয়ত


সেহরির আলাদা কোনও নিয়ত বা দোয়া নেই। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে যে পানাহার করা হয়, সেটাকে ইসলামের পরিভাষায় সেহরি বলে হয়। তাই সেহরি খাওয়ার সময় অন্যান্য খাবারের যে দোয়া আছে তা পড়ে নেওয়া সুন্নত।


খাবারের আগের দোয়া


খাওয়া শুরু করার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া পড়তেন, 


بسم الله وعلى بركةالله بعالى


উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারকাতিল্লাহ


অর্থ: আল্লাহ তায়ালার নামে খানা খাওয়া শুরু করছি এবং আল্লাহ তায়ালার বরকত প্রার্থনা করছি। (সাআলাবী)।


রোজার নিয়ত


বাংলাদেশে রোজার একটি আরবি নিয়ত প্রসিদ্ধ— যেটা মানুষ মুখে পড়ে থাকেন। তবে এটি হাদিস ও ফিকাহের কোনো কিতাবে বর্ণিত হয়নি। তবে কেউ চাইলে পড়তে পারেন। 


রোজার আরবি নিয়ত


نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم


রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।


অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।


রোজার নিয়ত বাংলায়


ফরজ বা নফল রোজার নিয়ত আরবিতে হওয়া জরুরি নয়। যেকোনো ভাষায় নিয়ত করা যায়। নিয়ত এভাবে করা যায়— আমি আজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম। 

 (জাওয়াহিরুল ফিকাহ: খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৭৮)

ইফতারির দোয়া 


بِسْمِ الله - اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ


উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু।

অর্থ : ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহঃ

প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও সবল মুমিনের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা নয়; বরং রোজা রাখা অবস্থায় মেনে চলতে হয় বেশ কিছু নিয়মও।

  •  ইচ্ছা করে বমি করা
  •  বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা
  •  মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব
  •  ইসলাম ত্যাগ করলে
  •  গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে
  •  প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে
  •  রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে
  •   ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে
  •  মুখ ভরে বমি করলে
  •   ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরও কিছু খেলে
  •  বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে
  •  কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে 
  •  জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে
  •  অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে
  •  রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে। (ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)।

কোরআনের আলোকে রোজার ফজিলত 

সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূর্ণ করবে। যাদের জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক হয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া-একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা তা জানতে। (সূরা বাকারাহ-১৮৪)

 সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্যে তোমাদের স্ত্রীদের বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্যে এবং তোমরাও তাদের জন্যে পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথে খিয়ানত করছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে মার্জনা করেছেন, সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে সংগত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন (অর্থাৎ সন্তান) তা অন্বেষণ করো। আর তোমরা আহার করো ও পান করো যতক্ষণ তোমাদের জন্যে (রাত্রির) কালো রেখা থেকে ফজরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়ে যায়। এরপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। আর তোমরা মসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা, সুতরাং এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্যে তার আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া বা আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে। (সূরা বাকারাহ-১৮৭)


 شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَبَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَمَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَلَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَلِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَلِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

রমযান মাস- যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন এ সময় অবশ্যই রোযা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য দিনে সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ সেটাই চান, তোমাদের জন্য জটিলতা চান না, এবং (তিনি চান) যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পূরণ করে নাও এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে পথ দেখিয়েছেন, সেজন্য আল্লাহর তাকবীর পাঠ কর  এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

সূরা বাকারাঃ আয়াত-১৮৫

হাদীসের আলোকে রোজার ফজিলত

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও পর্যালোচনাসহ রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী: ৩৮, সহীহ মুসলিম: ৭৬০)

 হযরত সাহল বিন সা’দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেছেন, জান্নাতের একটি দরজা আছে, একে রাইয়ান বলা হয়,। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন একমাত্র সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ এই পথে প্রবেশ করবে না। সেদিন এই বলে আহ্বান করা হবে- সিয়াম পালনকারীগণ কোথায়? তারা যেন এই পথে প্রবেশ করে। এভাবে সকল সিয়াম পালনকারী ভেতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অত:পর এ পথে আর কেউ প্রবেশ করেবে না। (সহীহ বুখারী: ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম: ১১৫২)

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেছেন, সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনোদিন সিয়াম পালন করলে তার মুখ থেকে যেন অশ্লীল কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে অথবা ঝগড়ায় প্ররোচিত করতে চায় সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী। (সহীহ বুখারী: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সিয়াম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য। কিন্তু সিয়াম আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, তার শপথ! অবশ্যই সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চেয়েও সুগন্ধি। সিয়াম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশি, যা তাকে খুশি করে। যখন যে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (সহীহ বুখারী: ১৯০৪, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটা এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তা’য়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানগুলোকে আটক রাখা হয়। আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণলাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি। (সুনানুন নাসায়ী:২১০৬)

রোজা রেখে চুল কাটা যাবে কি?

জ্বী, আপনি রোজা অবস্থায় শরীরের অবাঞ্ছিত লোম, পশম, নোখ, দাড়ি এবং চুল কাটতে পারবেন। এতে আপনার রোজা ভঙ্গ হবে না ।

সেহরি না খেলে রোজা হবে?

সেহরি খাওয়া উত্তম । রাসূল ( সাঃ ) বলেছেন সেহরি হচ্ছে বরকতময় খাবার। তবে কেউ যদি সেহরি না খেয়ে রোজা রাখে তবে তা জায়েজ হবে।

বমি করলে কি রোজা ভেঙে যায়?

না, রোজা অবস্থায় মুখ ভরে বমি হলেও রোজা ভাঙবে না। তবে ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তির বমি হলে তাকে সে রোজা কাজা করতে হবে না (অর্থাৎ তার রোজা ভাঙবে না)। আর যে ইচ্ছাকৃত বমি করবে, সে যেন রোজার কাজা করে।।

শবে মেরাজের রোজা কয়টি?

শবে মেরাজের নির্দিস্ট কোন রোজা নেই। কোরআন হাদীসে আদেশ পাওয়া যায়নি।

জিলহজ্জ মাসের রোজা কয়টি?

জিলহজ মাসের শুরু থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত রাসুল (সা.) সিয়াম পালন করতেন এবং যারা হজে যাবে না, তারা জিলহজ মাসের ৯ তারিখ, যেটা আরাফার দিবস রয়েছে, আরাফার দিবসে সিয়াম পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ মনে করেন, এই ৯ দিনই সিয়াম পালন করবেন, তাহলে তিনি করতে পারেন। আর এর মধ্যে কেউ যদি মনে করেন, এর বেশির ভাগ সিয়াম পালন করবেন, সেটাও করতে পারেন। যেহেতু নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল, এমনকি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের চেয়েও বেশি প্রিয় আমল।’ সুতরাং, এই কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ এই দিনগুলোতে সিয়াম পালন করা যেতে পারে, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন। শুধু ঈদের দিন সিয়াম পালন করতে পারবেন না।

আরাফার রোজা কয়টি?

১টি। জিলহজ্জ্ব মাসের নবম দিন কে আরাফার দিবস বলা হয়। হাদীসে আছে এই দিন সাওম পালন করলে ২ বছরের গুনাহ মাফ হয় ।

No comments:

Post a Comment

Be cool when comment