জীবন ও জীবিকার সন্ধানে

সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

কাদিয়ানী কারা , কাদিয়ানীদের আকিদা সমূহের বিস্তারিত সঠিক ব্যাখা

কাদিয়ানী কারা

কাদিয়ানী কারা, তাঁরা কি কি আকিদা মানে, বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের সংখ্যা কত, কাদিয়ানীদের মসজিদ দেখতে কেমন?, তাঁরা নামাজ পড়ে নাকি উপাসনা করে বিস্তারিত জানতে পড়তে থাকুন।

কাদিয়ানী কারা
কাদিয়ানী কারা

আসুন জেনে নেই কাদিয়ানী কাকে বলে? কাদিয়ানী কারা বা কাদিয়ানী কাকে বলে তা বুঝতে হলে একটু মুসলিম ফেরকার আলোচনা করতে হবে। আমরা মুসলিম সম্প্রদায় বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত। আমরা কেউ বলি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মাটির তৈরি আবার কেউ বল তিনি নূরের তৈরি। এই তর্কে জড়িয়ে আমরা মারামারি করি, এক দল আরেক দলকে কাফের বলি। এইযে দলাদলি ও ভাগ - উপভাগ - এই গুলো হল ইসলামের ফেরকা। আমরা মুসলিম সম্প্রদায় যে বিভিন্ন দল ও উপদলে ভাগ হয়ে যাব তা নবী করিম সাঃ ১৫০০ বছর আগেই বুঝেছিলেন। তাই তিনি বলে ছিলেন -

নিশ্চয় বনী ইসরাঈলরা ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৭০ দল ধ্বংস হয়ে গেছে এবং একটি দল নাজাত পেয়েছে।আর আমার উম্মত অচিরেই ৭২ দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে ৭১ দল ধ্বংস হবে ( জাহান্নামে যাবে ) এবং একটি দল মুক্তিপ্রাপ্ত হবে। ছাহাবাগণ বলেন - মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি? রসূল (সাঃ) বলেন- তারা একটি দল, তারা একটি দল। - আল হাদিস সূত্রঃ ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া
নবী করিম সাঃ এর এই হাদিসের প্রমাণ হলাম আমরা - মুসলিম সম্প্রদায়। আমরা আজ ৭২ ফেরকায় বিভক্ত। এই ৭২ ফেরকার একটি হলো - কাদিয়ানী সম্প্রদায়।


কাদিয়ানীদের আকিদা বা ধর্ম বিশ্বাস

কাদিয়ানীদের কলেমা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তাঁদের কিবলা হলো -মক্কার বায়তুল্লাহ শরীফ মানে মসজিদুল হারাম। তাঁদের কিতাব - হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাজিল হওয়া সেই মহা পবিত্র গ্রন্থ - আল কোরআন। তাঁদের নামাজ - পাঁচ ওয়াক্ত। রোযা রাখার মাস - আরবি মাসের - রমজান মাস। ঈদুল ফিতর- শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখে। ঈদুল আযহা - বাংলাদেশের অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায় যে দিন ঈদুল আযহা পালন করে ,ঠিক সেই দিন বাংলাদেশের কাদিয়ানী সম্প্রদায় ঈদুল আযহা পালন করে।


মহান আল্লাহ ও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে সকল জিনিস বা দ্রব্য কে হারাম বলেছেন কাদিয়ানীরা সে সকল দ্রব্য কে হারাম মানে এবং মহান আল্লাহ ও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে সকল জিনিস বা দ্রব্য কে হালাল বলেছেন কাদিয়ানীরা সে সকল দ্রব্য কে হালাল মানে। আল্লাহ ও রাসুল কর্তৃক বর্ণীত হজ্ব ও যাকাতের বিধানুসারে কাদিয়ানীরা তা পালন করে। এবার আসুন তাঁদের ( কাদিয়ানীদের) আকিদা বা ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে তাঁদের ধর্ম প্রবক্তা হযরত মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আঃ) কি বলেছেন তা জানি-

আমরা ঈমান রাখি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং সৈয়্যদনা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল এবং খাতামুল আম্বিয়া । আমরা ঈমান রাখি যে ফিরিশতা, হাশর, জান্নাত এবং জাহান্নাম সত্য এবং আমরা আরও ঈমান রাখি যে কুরআন শরীফে আল্লাহতা'লা যাহা বলিয়াছেন এবং আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম হইতে যাহা বর্ণিত হইয়াছে উল্লিখিত বর্ণনানুসারে তাহা সবই সত্য। আমরা এও ঈমান রাখি, যে ব্যাক্তি এই ইসলামী শরীয়ত হইতে বিন্দু মাত্র বিচ্যুত হয় অথবা যে বিষয়গুলি অবশ্যকরণীয় বলিয়া নির্ধারিত তাহা পরিত্যাগ করে এবং অবৈধ বস্তুকে বৈধ করণের ভিত্তি স্থাপন করে, সে ব্যাক্তি বে-ঈমান এবং ইসলাম বিরোধী। আমি আমার জামা'তকে উপদেশ দিতেছি যে, তারা যেন বিশুদ্ধ অন্তরে পবিত্র কলেমা " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" এর উপর ঈমান রাখে এবং এই ঈমান লইয়া মরে। কুরআন শরীফ হইতে যাহাদের সত্যতা প্রমাণিত, এমন সকল নবী ( আলাইহিমুস সালাম ) এবং কিতাবের উপর ঈমান আনিবে। নামাজ, রোযা, হজ্জ ও যাকাত এবং এতদ্ধব্যাতীত খোদাতা'লা এবং তাহার রসুল কর্তক নির্ধারিত কর্তব্যসমূহকে প্রকৃতপক্ষে অবশ্য-করনীয় মনে করিয়া, যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে নিষিদ্ধ মনে করিয়া সঠিক ভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করিবে। মোটকথা, যে সমস্ত বিষয়ের উপর আকিদা ও আমল হিসাবে পূর্ববর্তী বুযুর্গাণের "ইজমা" অর্থাৎ সর্ববাদি-সম্মত মত ছিল এবং যে সমস্ত বিষয়কে আহলে সুন্নত জামাতে'র সর্ববাদি-সম্মত মতে ইসলাম নাম দেওয়া হইয়াছে, সেই সব সর্বতোভাবে মান্য করা অবশ্য কর্তব্য। যে ব্যাক্তি উপরোক্ত ধর্মমতের বিরুদ্ধে কোন দোষ আমাদের প্রতি আরোপ করে, সে তাকওয়া বা খোদাভীতি এবং সততা বিসর্জন দিয়া আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটনা করে। কিয়ামতের দিন তাহার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ থাকিবে যে, কবে সে আমাদের বুক চিরিয়া দেখিয়াছিল যে, আমদের মতে এই অঙ্গীকার সত্বেও অন্তরে আমরা এই সবের বিরোধী ছিলাম? - হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ) সূত্রঃ মহা-সুসংবাদ [ ৫০ নম্বর পৃষ্ঠা ]
এই হলো কাদিয়ানীদের ধর্ম বিশ্বাস বা আকিদা।

এবার আসুন জেনে নেই কাদিয়ানীদের সম্পর্কে আলেমগণ কি বলেন? কাদিয়ানী সম্প্রদায় কেন মুসলিম নয়?

উপমহাদেশের অনেক বিখ্যাত আলেম ও তাঁদের দল কাদিয়ানীদেরকে কাফের বা অমুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করে। তাঁদের দাবী কাদিয়ানীরা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) কে আখেরি নবী বা শেষ নবী হিসেবে মানেনা।তাঁদের আরো অভিযোগ হলো - হযরত মির্যা গোলাম আহমদ আঃ কে কাদিয়ানীরা নবী হিসেবে মানে , তাই কাদিয়ানীরা কাফের। কাদিয়ানীদেরকে আলেমগণ বৃটিশদের চর বা সাহায্যকারী বলে থাকেন।

আলেমগণের অভিযোগ খণ্ডনে কাদিয়ানীরা কি বলে ?

কাদিয়ানীরা দাবি করে যে - আমরা মনে প্রাণে অন্তঃকরণে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসুল এবং খাতামুল আম্বিয়া । তাঁর পরে আর কোন শরীয়ত বাহী নবী নেই। বৃটিশরা হচ্ছে খৃষ্ট ধর্মাবলম্বী , আর তাঁদের নবী হচ্ছে - হযরত ঈসা আঃ , খৃষ্টানরা দাবী করে যে- হযরত ঈসা আঃ কে আল্লাহ পাক আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন; অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ও একথা সমর্থন করেন কিন্তু আমরা আহমদীরা বলি যে - হযরত ঈসা আঃ মারা গেছেন । পাঠক আপনিই বলুন - বৃটিশদের চর কাদিয়ানীরা নাকি যারা অভিযোগ করে তাঁরা। আর আমরা আহমদী ; কাদিয়ানী নয়, ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপূর জেলার কাদিয়ান নামক গ্রামে যারা বসবাস করে - তাঁরা কাদিয়ানী, কাদিয়ানি কোন ধর্মের নাম নয়- একটা গ্রামের নাম আর যারা সে গ্রামে যারা বসবাস করে তাঁরা সবাই কাদিয়ানী। ধর্ম যাইহোক না কেন - হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান বা শিখ

কাদিয়ানী ও অন্যান্য মুসলিমের কিছু পার্থক্য

মানদণ্ড কাদিয়ানী ফিরকার লোকজন অন্যান্য ফিরকার লোকজন
নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত পাঁচ ওয়াক্ত
রোযা পুরো রমজান মাস পুরো রমজান মাস
কিতাব মহাগ্রন্থ আল কুরআন মহাগ্রন্থ আল কুরআন
জুম্মার খুৎবা মাতৃভাষায় আরবিতে
কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ বৈধ
যৌতুক নিষিদ্ধ বৈধ
মাজার জিয়ারত নিষিদ্ধ বৈধ
জিহাদ নিষিদ্ধ বৈধ
নেতৃত্ব সকল কাদিয়ানীর একজন খলিফা খলিফা নেই
বায়তুল মাল আছে নেই
বাৎসরিক ইসলামী বাজেট আছে নেই
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে শেষ নবী মানে * মানে
হযরত গোলাম আহমদ আঃ কে ইমাম মাহদী হিসেবে মানে মানে না
হযরত ঈসা আঃ আকাশে আছেন মানে না মানে

* হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে কাদিয়ানীরা সম্মানের দিক থেকে সর্বোচ্চ ও সর্ব শেষ নবী হিসেবে মানে এবং মহাগ্রন্থ আল কুরআন কে সর্ব শেষ আসমানী কিতাব হিসেবে মানে কিন্তু রিসালাতের দরজা বন্ধ এ কথা কাদিয়ানীরা মানে না ।
** কাদিয়ানী ফেরকার এই বিশ্বাস যে - হযরত ঈসা আঃ অন্যান্য নবী ও রাসুলদের মত মারা গেছেন।

কাদিয়ানীদের ইতিহাস

কাদিয়ানীরা যাকে ইমাম মাহদী ও উম্মতী নবী হিসেবে মানে সেই মহা পুরুষ হযরত মির্যা গোলাম আহমদ আঃ ভারতে পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপূর জেলার কাদিয়ান নামক গ্রামে ১৯৩৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এ কারনেই উনার প্রতিষ্ঠিত ফেরকার বা জামাতের অনুসারীদেরকে অন্যান্য মুসলিম ফেরকার অনুসারীরা কাদিয়ানী নামে ডাকে ঠিক যে রকম সকল ইহুদী ফেরকার অনুসারীরা হযরত ঈসা আঃ এর অনুসারীদেরকে নাসারা নামে ডাকে কারণ হযরত ঈসা আঃ বেথেলহেমের নাসারা নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। কাদিয়ানী ফেরকার যাত্রা শুরু হয় ২৩শে মার্চ ১৮৮৯ সালে। ঐ দিন হযরত মির্যা গোলাম আহমদ আঃ ইমাম মাহদী হিসেবে বয়াত নেওয়া শুরু করেন। বর্তমানে কাদিয়ানী ফিরকা বিশ্বের ২০০ চেয়ে অধিক দেশে বিস্তৃত। আফ্রিকা মহাদেশে এই ফেরকা ব্যাপক জনপ্রিয়। এই হলো সংক্ষিপ্ত আকারে কাদিয়ানীদের ইতিহাস


বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের সংখ্যা বিস্তার করল যেভাবে

আসুন এবার জেনে নেই কাদিয়ানী কারা , বাংলাদেশে কার মাধ্যমে কাদিয়ানীদের সংখ্যা বিস্তার করল, ১৯০৫ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা নিবাসী আহমদ কবির নূর মোহাম্মদ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ এর হাতে বয়াত গ্রহণ করে আহমদী হন। এর পরে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলার রঈস উদ্দিন খাঁ আহমদী হোন , ১৯০৯ সালে বগুরা নিবাসী শিক্ষার্থী মোবারক আলী কাদিয়ান গিয়ে বয়াত গ্রহণ করে আহমদী হোন । এই তিন জনের কেউ বাংলাদেশে আহমদীয়া জামাত প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। বাংলাদেশে আহমদীয়া জামাত প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিবাসী মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ। তিনি যখন আহমদী হন তখন তিনি বাংলাদেশের আলেম সমাজের শিরোমণি ছিলেন আর একারণেই দলে দলে উনার হাতে বয়াত গ্রহণ করে আহমদী হয়ে যান। বর্তমানেও ব্রাহ্মনবাড়ীয়াতেই আহমদীদের সংখ্যা বেশি। আশা করি বুঝতে পারছেন - কাদিয়ানী কারা

কাদিয়ানী সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট

কাদিয়ানী মসজিদ দেখতে কেমন? কাদিয়ানীদের নামাজ পড়ার নিয়ম কি?

৬টি মন্তব্য:

  1. কাদিয়ানী কখনো মুসলিম হতে পারেনা,শরীরের একটা অঙ্গ না থাকলে যেমন শরীর পরিপূর্ণ হয়না,তেমনি আল্লাহ তাআলা যে গুলোর প্রতি ঈমান আনতে বলেছেন,তার মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্ব নবী মোহাম্মদ সাঃ উপর পরিপূর্ণ ঈমান আনতে হবে।যেহেতু কাদিয়ানী শেষ নবী মানেনা তা হলে তারা কোরআন ও হাদিস মানেনা ,সে হেতু তারা মুসলমান দাবী করতে পারেনা।

    উত্তরমুছুন
  2. Thank your Sir. For this helping post. Really this post help me to understnad the topic properly.
    Very Nice Post

    উত্তরমুছুন
  3. এখনো রেসালতের দরজা খোলা থাকলে মির্যা কাদিয়ানী কিজন্য নিজেকে মুহাম্মদী সিলসিলার শেষনবী হওয়ার দাবী করল? তাযকিরাতুশ শাহাদাতাইন বাংলা পৃষ্ঠা ৮২।

    আসলে কাদিয়ানীদের লিখায় মিথ্যা আর প্রতারণা ভরপুর।

    উত্তরমুছুন
  4. আমি কাদিয়ানীদের সাথে জিহাদ করতে চাই

    উত্তরমুছুন
  5. অনেক তেল মাখালি রে তুই

    উত্তরমুছুন

ভদ্রতা ও শালীনতার সহিত মতামত দিন