১৯৭১ সালের মুক্তির সংগ্রাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ

আচ্ছা আপনারাই বলুনতো - আমরা কি এই বাংলাদেশ ছেয়েছিলাম! এই বাংলাদেশের জন্যই কি ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী নিজেদের জীবন দিয়েছে! যদি কবর থেকে তুলে তাদেরকে প্রশ্ন করা হয় - আপনারা কি এই রকম বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, আমি নিশ্চিত তারা উত্তরে বলবে-
যদি জানতাম এই রকম বাংলাদেশ পাব, তাহলে নিজেদের জীবন কেন ; শরীরের একটা পশমও দিতাম না।যে রকম ভাবে জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা বলেন-
যদি জানতাম-বাংলাদেশের অবস্থা এই রকম হবে,তবে পাকিস্তানের গোলামী করাকেই নিয়তী মনে করে মেনে নিতাম।আমাদের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি বলেছেন-
আমাকে যৌবনে ফিরিয়ে দিন , বাংলাদেশ কে মুক্ত ও সবার বসবাসের উপযোগী করে দিব।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালীকে মুক্তি দিতে পারেনি তবে ভাগ করতে পেরেছে; যে রকম ভাবে ভাগ করেছিল - জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব। জনাব জিন্নাহ বাঙ্গালীকে ধর্ম দিয়ে দু'ভাগ করেছেন আর শেখ মুজিবের মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালীকে- মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি হিসেবে ভাগ করে ফেলেছে। বাঙ্গালীকে শুধু ভাগ করাই হচ্ছে, বাঙ্গালীর ধর্মে ভাগ- হিন্দু-মুসলমান;মুসলমানের ধর্মে ভাগ-শিয়া-সুন্নি-আহমদী-কাদিয়ানী;মুক্তিযুদ্ধের ভাগ-মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি। আমরা আর কত ভাগ হব? সেই কবে ফিরিঙ্গীরা আমাদের ওপর ভাগ কর - শাসন কর নীতি প্রয়োগ করেছিল ; এখনও তা বলবদ আছে- থামার নামই নিচ্ছেনা। তাঁদের ( ইংরেজদের) নীতির কত শক্তি! কবে আমরা ভাগ হওয়া বন্ধ করতে পারব? আপনাদের মনে কি কখনো প্রশ্ন জাগে যে - আমরা স্বাধীনতার আগে ভালো ছিলাম নাকি এখন ভালো আছি ? আমার মনে কিন্তু প্রায় সময় এই প্রশ্ন ঘোরপাক করে। সেই থেকে চেষ্টা করছি এই সমীকরণটা মেলাতে কিন্তু সাহস পাচ্ছিনা পাছে যদি- স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আমাকে বিপক্ষ মনে করে অথবা বিপক্ষের শক্তি যদি আমাকে পক্ষের শক্তি মনে করে, তবেতো আর রেহাই নেই । একপক্ষ আমাকে বলবে নাস্তিক আবার অন্য পক্ষ বলবে রাজাকার - যাই কই বলেন? তবু সমীকরণটা মিলাতে হবে- কারণ এই রকম বাংলাদেশের জন্য ৩০ লাখ বাঙ্গালী প্রাণ দেননি; তাঁদের আত্মত্যাগ যদি বিফলে যায় তবে আমরা শান্তিতে থাকব কি করে?
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কারণঃ
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ দীর্ঘ ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক শ্রেনী নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর অবর্ণনীয় নিপীড়ন, নির্যাতন ও অত্যাচার চালিয়েছ। ইংরেজরা যদি বাঙ্গালীদের ওপর এরকম অত্যাচার চালাতো, আমরা মেনেই নিতাম- কারণ তাঁদের ধর্ম, বর্ণ ও সংস্কৃতি আমাদের চেয়ে আলাদা; কিন্তু আমাদেরকে অত্যাচার করেছে কারা? আমাদের জাত ভাই - পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। একবার ভেবে দেখুন কেন ইংরেজরা বাঙ্গালীদের উপর অত্যাচার করতে পারেনি বা করেনি? কেন তারা তাদের ইংরেজী ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়নি? কারণ - তখন বাঙ্গালী একা ছিলনা , বাঙ্গালী ছিল ভারত বর্ষের অংশ। তখন ভারত বর্ষের যেকোন স্থানে অত্যাচার, নিপীড়ন হলে সবাই মিলে একযোগে প্রতিবাদ করতো ; তখন প্রতিবাদ করার আগে ক্ষতিয়ে দেখতনা অত্যাচার কার ওপর হচ্ছে - হিন্দুর ওপর,না মুসলমানের ওপর ; কারণ তখন সবাই ভারত বর্ষের নাগরিক ছিলাম এবং ভারত বর্ষকে ইংরেজদের হাত মুক্ত করাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। তারপর এলো ভয়াবহ ১৯৪৭ ! ।
ভয়াবহ ১৯৪৭
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ও বড় আকারের দেশান্তরের ঘঠনা গঠল ১৯৪৭ সালে। জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের মাধ্যমে ইংরেজরা ভারত বর্ষকে দু'ভাগে ভাগ করে ফেলল - হিন্দুস্থান আর পাকিস্থান। পাকিস্থান হলো মুসলমানদের দেশ আর হিন্দুস্থান হলো হিন্দুদের দেশ। সেই থেকে ভারত উপমহাদেশে ধর্মীয় রাজনীতির সূচনা আর আমাদের প্রিয় বঙ্গ দু'ভাগে ভাগ হলো - পূর্ব বঙ্গ ও পশ্চিম বঙ্গ নামে । পূর্ব বঙ্গের হিন্দুরা নিজের বাপ-ঠাকুরের ভিটে মাটি ছেড়ে পালিয়ে গেল পশ্চিম বঙ্গে আর পশ্চিম বঙ্গের মুসলমানরা নিজেদের চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি , ব্যাবসা ফেলে চলে এলো পূর্ব বঙ্গে । একবার মনে মনে ভাবুনতো আপনাকে যদি এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় - কেমন লাগবে আপনার? তারা কি ধর্মকে ভালোবেসে দেশ ত্যাগ করেছে না ঘৃনা করে? এদেশ ছেড়ে যে হিন্দুরা পশ্চিম বঙ্গে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে তাদের মনে কি মুসলমানদের জন্য একটুও সহানুভূতি আছে? আর যে মুসলমানরা বাধ্য হয়ে পশ্চিম বঙ্গ থেক পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে তাদের মনে কি হিন্দুদের জন্য একটুও সহানুভূতি আছে না থাকার কথা ?
No comments:
Post a Comment
Be cool when comment