জীবন ও জীবিকার সন্ধানে

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের অবদান

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের অবদান ও মহান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের অবদান নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন মনে করছি কারণ জামাতী ইসলামী যখন বলে - "স্বাধীনতা এনেছি , স্বাধীনতা রাখব " তখন জাতি হিসেবে লজ্জিত হয় আর ব্যাক্তি হিসেবে, সাধারণ একজন বাংলাদেশী হিসেবে ভয়ে কুচকে যায় কারণ অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে - জামাতীরা মিথ্যাকে সত্য প্রমাণিত করতে পারে আর সত্য কে মিথ্যা । আমাদের মহান স্বাধীনতার ইতিহাস এক নিবন্ধনে লিখে শেষ করা যাবেনা । আর কিভাবে শেষ করব? সাত সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তা এক নিবন্ধন কেন ১০০ কোটি নিবন্ধন লিখেও শেষ করা যাবেনা। এই দেশের সূর্যসন্তানদের আত্মকাহিনী লেখার কাগজ আর কলম পৃথিবীতে আছে বলে আমার মনে হয়না।আজকে নিবন্ধন লিখতে বসিনি ; প্রশ্নের উত্তর মিলাতে বসেছি। একটা প্রশ্ন আমার মনে প্রায়ঃ সময় খোঁচা মারে। সে প্রশ্নের উত্তর মেলানোর জন্য আজকে চেষ্টা করব। আমি যদি কোথাও ভুল করে থাকি,আপনারা কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস ও ১৯৭১ সালের কথা উঠলেই হিন্দুরা বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলে যে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ; বেশি অবদান রেখেছে। কিন্তু আমি তাদের অবদান দেখতে পাচ্ছিনা। তারা ( হিন্দুরা ) অবদান না রেখেই, মিথ্যা বলে থাকে বলেই আমার বিশ্বাস। যে রকম বলে থাকে জামাতে ইসলামীরা । আমি কয়েকটা প্যারামিটারে তাদের অবদান মাপার চেষ্টা করছি ; আপনারাও আমাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। যারা ১৯৭১ সালে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে তাদেরকে আমরা বীরশ্রেষ্ঠ ( ১ নং প্যারামিটার ) উপাধি দিয়েছি ; বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি পাওয়া এই সাত জনের মধ্যে একজনও হিন্দু আছে কি? আসুন সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম জেনে নেই; তাহলে বিচার করতে আপনার সুবিধা হবে।




সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নামঃ

  1. মুন্সি আব্দুর রুউফ
  2. মোঃ মোস্তফা কামাল
  3. মতিউর রহমান
  4. নূর মোহাম্মদ শেখ
  5. হামিদুর রহমান
  6. রুহুল আমীন
  7. মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

উপরের সাতটি নামের মধ্যে একটি হিন্দু নাম আছে কি? যদি না থাকে তাহলে হিন্দুরা মিথ্যা কথা বলে বেশি ফায়দা লুটে নেয় কিভাবে? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের অবদান আপনি কোথাও খুঁজে পেয়েছেন কি ?




১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য ৬৯ জনকে আমরা বীর উত্তম ( ২ নং প্যারামিটার ) খেতাব দিয়েছি। তাদের মধ্যে মাত্র একজন হিন্দু। তার নাম চিত্ত রঞ্জন দত্ত। ১৭৫ জনকে আমরা বীর বিক্রম ( ৩ নং প্যারামিটার ) খেতাব দিয়েছি; তাদের মধ্যে ২ জন হিন্দু। তারা হলেন জগতজ্যোতি দাস, নীলমণি সরকার। বীর প্রতীক ( ৪ নং প্যারামিটার ) খেতাব প্রাপ্ত ৪২৬ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন হলেন হিন্দু। তারা হলেন - অলীক কুমার গুপ্ত ও দেবদাস বিশ্বাস ( খোকন ) । সেক্টর কমান্ডার ও সাবসেক্টর কমান্ডার ( ৫ নং প্যারামিটার ) হিসেবেও কারো নাম পাওয়া গেলনা। যার নাম পাওয়া গেল আমার হিসেবে আগেই যোগ হয়েছেন , তিনি হলেন ৪ নং সেক্টর কমান্ডার - চিত্ত রঙ্গন দত্ত (বীর উত্তম )। এখন আমার মনে হচ্ছে তাদেরকে ( হিন্দুদেরকে ) বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারে পাওয়া যাবে। আসুন জেনে নেই বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার ( ৬ নং প্যারামিটার ) কারা পরিচালনা করছিলেন



১৯৭১ সালের বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী পরিষদ ও দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যাক্তি বর্গঃ

  • অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি - সৈয়দ নজরুল ইসলাম
  • প্রধানমন্ত্রী - তাজউদ্দীন আহমদ
  • পররাষ্ট্র মন্ত্রী - খন্দকার মোশতাক আহমদ
  • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী - এ এইচ এম কামারুজ্জামান
  • অর্থমন্ত্রী - এম মনসুর আলী
  • প্রধান সেনাপতি - কর্নেল এম এ জি ওসমানী
  • চিফ অব স্টাফ - কর্নেল এম এ রব
  • বিমান বাহিনীর প্রধান - গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার
  • প্রতিরক্ষা সচিব - আবদুস সামাদ
  • উপ সচিব - আকবর আলী খান ও এস এ ইমাম
  • সহকারী সচিব - নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও এম এইচ সিদ্দিকী

উপরে উল্লেখিত ব্যাক্তিদের মধ্যে কাউকে কি আপনার হিন্দু বলে মনে হয়? যদি আপনার উত্তর হয় - না। তাহলে হিন্দুরা ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে কিভাবে অবদান রাখল, আমাকে বলবেন কি? তাহলে কি যে ৩০ লক্ষ্য শহীদ ও ৩ লক্ষ্য বিরংগনার কল্যাণে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি , তারা সবাই হিন্দু ছিল? যদি তাই হয় তাহলে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল কারা? মুসলমানরাতো পালানোর জাতি নয়;মুসলমানরা প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল আর হিন্দুরা প্রাণ বাঁচাতে।


আরো পড়ুনঃ

বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান , বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বিশ্ব হতবাক, পাকিস্তানের মাথায় হাত

২টি মন্তব্য:

  1. https://agnibir.com/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85/

    উত্তরমুছুন
  2. শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বীর উত্তম চিত্তরঞ্জন, বীর বিক্রম জগৎজ্যোতি দাস, বীর প্রতীক অলীক কুমার গুপ্ত, বীর বিক্রম নীলমনি সরকার, জাতীয় পতাকা যার নকশাকার হচ্ছেন “শিব নারায়ণ দাশ”,
    শুরুতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও এই যুদ্ধে ভূমিকা ও অবদানের কৃতিত্ব নিয়ে যে রাজনীতি ঘটেছিলো সেটি না বললে এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘোষিত প্রথম ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ জগতজ্যোতি দাস এর খেতাব স্বাধীনতার পর কেড়ে নেয়া হয়েছিলো। জগতজ্যোতি দাসের গ্রুপের নাম ছিলো ‘দাস পার্টি’ যা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের জন্য ত্রাস হয়ে উঠেছিলো। কী পরিমাণ আক্রোশ তিনি সৃষ্টি করেছিলেন যে তার লাশ পেয়ে পাকিস্তানীরা ও রাজাকাররা বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে বেনোয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে জনসাধারণকে দেখিয়েছিলো পাকিস্তানের অখন্ডতার বিরুদ্ধে কাজ করলে ফল এরকমই হবে। জনগণ ভুলে গেছে সে দৃশ্য। নইলে কি করে তারা ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে হিন্দুরা নাই কেন’ এই রকম ইতিহাসে মাথা দোলায়?
    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে প্রায় অস্বীকার করা হয়েছে। যে কারণে ‘বীরশ্রেষ্ঠদের’ সকলেই সেনাসদস্য। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীদের অবদানকেও প্রায় অস্বীকার করা হয়েছে! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চারটি খেতাব দেয়া হয়েছে, বীরশেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক। একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে- বীর উত্তম দেয়া হয় ৬৮জনকে তার মধ্যে বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা মাত্র ৫ জন! অথচ পুরো মুক্তিযুদ্ধে জানবাজী করে সম্মুখ সমরে শত্রুর কাছে অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলো সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র সমাজ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধারা। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা উচিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর সদস্যদের অকুতভয় লড়াকু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যেভাবে প্রাণ দিয়েছিলো তার জন্য কোন খেতাব রাখা হয়নি। কয়েকজন বিদেশী স্বেচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের জন্যও কোন খেতাব রাখা হয়নি। সেখানে ‘হিন্দু’ জনগোষ্ঠিকে মুক্তিযুদ্ধে যে একটা আলাদা পর্দা দিয়ে হাইড করা হবে সেটা কি খুব অবাক করা বিষয়? যে আদিবাসী পাহাড়ী জনগোষ্ঠির মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো সেটা কতজন জানে? শুধু চাকমা রাজা রাজাকার ছিলেন সেই ইতিহাসকে বড় করে দেখানো ছাড়া ঐ জনগোষ্ঠির মানুষদের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাকে কেন গোপন করা হয়েছে? আপনারা কি কেউ জানেন তিনশো সাঁওতাল তরুণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো? কেউ সাঁওতাল মুক্তিযোদ্ধাদের নেতা সাগরাম মাঝি, বিশ্বনাথ টুডু নাম শুনেছেন? রাজা মপ্রু’র নাম শুনেছেন? রাখাইন মুক্তিযোদ্ধা উ-মংয়ান, উ-ক্যহ্রচিং, উ-উসিতমং… মণিপুরী মুক্তিযোদ্ধা সাধন সিংহ, অনিতা সিংহ, বাণী সিনহা, নীলমনি চট্টপাধ্যায়, নন্দেশ্বর সিংহ, বিজয় সিংহ…। নীলমনি চট্টপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১২০০ মুক্তিযোদ্ধার একদল গড়ে উঠেছিলো! তাদের নাম কি আমাদের মূলধারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নেয়া হয়? চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় রাজাকার ছিলেন এটা বলতে ভালো লাগলে বারবার বলুন সমস্যা নেই কিন্তু এই রাজপরিবারের আরেক সদস্য কেকে রায় যে মুক্তিযুদ্ধে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন সেটি কেন বলেন না? রসময় চাকমা ভারতে মুক্তিযুদ্ধের টেনিং নিতে গেলে তাকে দলে নেয়া হয়নি! কেন? চাকমাদের পাকিস্তানপন্থি বানানো হয়েছিলো। পুরো আদিবাসী জনগোষ্ঠিকে মুক্তিযুদ্ধে স্থান দিলে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ সফল হবে কিভাবে? বাঙালি জাতীয়তাবাদ দিয়ে পাঞ্জাবী পাঠান মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়ে সফল হলেই সেটা যে ‘বাঙালী মুসলমান জাতীয়তাবাদ’ হবে সেটা হয়ত তাদের মনে মনে ছিলো! আজকে যখন ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুরা যুদ্ধ করেছিলো কিনা- তখন জগতজ্যোতির নামই শুনেনি এমন তরুণদের গুণে শেষ করতে পারবেন না। জ্যোতির যুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সেক্টর কমান্ডার সিআর দত্ত?…

    উত্তরমুছুন

ভদ্রতা ও শালীনতার সহিত মতামত দিন