ইসলাম ধর্মের এই করুনাবস্থার জন্য কে দায়ী ? বা ইসলাম কি সত্য ধর্ম পরম করুণাময় আল্লাহ কে সাক্ষী রেখে শুরু করছি। আমরা মুসলিমরা আজ চরম সংকটময় সময় অতিবাহিত করছি। ইসলাম ধর্ম আজ ঘৃণার জোয়ারে স্রোত মান। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ইসলাম ধর্ম কে অবমাননা করা হচ্ছে ; অধিকাংশ দেশেই ইসলাম ধর্ম আক্রমণের শিকার হচ্ছে । শুধু যে মুসলিমদের উপর – শারীরিক,মানসিক ও অর্থনৈতিক অত্যাচার হচ্ছে তা নয় ; পত্র-পত্রিকা, লিফলেট , হ্যান্ডবিল, বই-পুস্তক, টিভি চ্যানেল ও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ইসলাম বিরোধী তত্ত্ব ও মনগড়া বিষোদ্গার প্রচার করে ইসলামের মূলে আঘাত করা হচ্ছে । মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে - আসলেই ইসলাম কি সত্য ধর্ম?
পৃথিবীর কোথাও কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হলে মোড়ল রাষ্ট্রের হর্তা – কর্তারা এর হোতা হিসেবে চিহ্নিত করছে –মুসলিমদেরকে । মিডিয়া গুলো বড় বড় শিরোনামে ইসলামি সন্ত্রাসবাদ প্রচার করছে। এতেকরে ইসলাম ধর্ম কলঙ্কিত হচ্ছে । অন্যান্য ধর্মানুসারীদের কাছে ইসলাম ধর্ম মানে হচ্ছে – অশান্তি, উগ্র, সন্ত্রাসী, মৌলবাদী ও বোমাবাজি । ইসলাম ধর্মের এই করুনাবস্তার জন্য যতটুকু ইহুদি – খৃষ্টানরা দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী- ইসলাম ধর্মের নেতারা। আমার উপর রাগ করবেননা পাঠক । আমি হিন্দু, খৃষ্টান বা ইহুদী নয়; আমি একজন সাধারণ মুসলমান । কলেমা, নামাজ, রোযা,হজ্জ ও যাকাতে আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমি সত্যই বলছি- ইসলাম ধর্মের সর্বনাশ ইহুদি- খৃষ্টানদের চাইতে মুসলমান নেতারাই বেশি করেছে;করছে। আমার কথার সত্যতা পেতে হলে চলুন পেছনে ফিরে যাই:-
আমি আলোচনা শুরু করছি কলেমা দিয়ে। অন্য ধর্মাবলম্বী কোন নর-নারী যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চাই তাহলে মনে- প্রাণে বিশ্বাস করে পাঠ করতে হবে-“ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ”। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। মক্কার মূর্তি পূজারিরা, তৎকালীন ইহুদি- খৃষ্টানরা এই কলেমাকে সহজে গ্রহণ করতে চাইনি এবং এখনও সহজে গ্রহণ করতে পারেনা; তাদের কষ্ট লাগে,আঘাত লাগে বাপ- দাদার ধর্মে ।
ধর্ম ত্যাগ করা যায়না ! বা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করা যায় কি?
বাপ-দাদার ধর্মের শেকড়ে আঁকড়ে থাকার নামই- গোঁড়ামি । মানুষ মাত্রই মনে করে-“জন্ম সূত্রে যে ধর্ম পাওয়া যায় তাই সঠিক ; অন্য ধর্ম গুলি মিথ্যা । একটু ভেবে দেখুন- আসলে কি তা ঠিক ?। যদি ঠিক ই হয় তাহলে আমরা কিভাবে মুসলমান হলাম ?। আমাদের পূর্বপুরুষ যারা (যাদের কাছ থেকে ইসলাম ধর্ম জন্ম সূত্রে লাভ করে আসছি) তাঁরা কি জন্মানোর সময় মুসলমান ছিল নাকি তাঁরা ইসলামের উদারতা, মহানুভবতা আর শান্তি – শৃঙ্খলা দেখে, মুগ্ধ হয়ে অন্য ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছিল ?। যদি শেষোক্ত কথাটি সঠিক হয় তাহলে আমার সাথে আপনারা নিশ্চয় একমত হবেন যে- বাপ-দাদার ধর্ম প্রকৃত সত্য ধর্ম নয় ।
যুগে যুগে আল্লাহতালা ধর্ম কে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেছেন। বাপ-দাদার ধর্ম কে সত্য মনে করেই – ইহুদি সম্প্রদায়ের সন্তানরা ইহুদি থাকছে,হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্তানরা হিন্দু থাকছে আর মুসলিম সম্প্রদায়ের সন্তানরা মুসলিম থাকছে। প্রত্যেকেই নিজের ধর্ম কে সত্য মনে করছে। এরকম মনে করার কারণ কি? কারণ একটাই - তারা (সন্তানরা ) সাবালক বা স্বীয় বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার আগেই বাপ-দাদার ধর্মে নিক্ষিপ্ত হন বা বলা যেতে পারে জন্ম সূত্রে বাপ-দাদার ধর্ম লাভ করেন। সন্তানরা ছোট থেকে বড় হয় জন্ম সূত্রে লাভ করা ধর্মের নিয়ম – কানুনে; তাই বড় হয়ে বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার পরেও এমনকি বুদ্ধিজীবী হলেও ধর্মের মায়া ছাড়তে পারেনা; ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনা।
ধর্মীয় গোঁড়ামি বা ইসলাম ধর্ম
এই ধর্মীয় গোঁড়ামি পরবর্তীতে মৌলবাদে রূপ নেয়, যা জন্মায়-ধর্মের নামে সন্ত্রাস; ধর্মকে করে কলঙ্কিত। নিজ নিজ ধর্মের অনুসারীরা নিজ নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ ও সত্য মনে করার কারণেই সজ্ঞাত সৃষ্টি হয়। তাই ধর্মীয় মৌলবাদের মূলোৎপাটনের জন্য ভিন্ন ধর্মানুসারীদের প্রতি সহানুভূতি ও সত্য গ্রহণের অধিকার থাকতে হবে। যে অধিকার হবে প্রথম এবং প্রধান অধিকার।ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম হলেও মোল্লাদের বাড়া বাড়ি ও অজ্ঞতার কারণে বিশ্ব বাসী মুসলমানদের কে জঙ্গি ও বন্য হিসেবে জানে ।
বাপ-দাদার ধর্ম যে প্রকৃত সত্য ধর্ম নয় একথা অন্য ধর্মানুসারীরা না মানলেও মুসলমানরা মানে; আর যে মানেনা সে তৎকালীন মূর্তি পূজারী বা ইহুদি – খৃষ্টানদের সমতুল্য । একমাত্র মুসলমানরাই জানে অন্য ধর্মের কত-লোক ইসলাম ধর্মে এসে শান্তি খুঁজে। যদি বলি (নাউযুবিল্লাহ) হযরত মুসা(আঃ) মিথ্যা বা ভণ্ড তাহলে আমার ধর্মই থাকবেনা; কারণ মহা-গ্রন্থ আল-কুরানে যত নবী- রাসূলের নাম রয়েছে তাঁরা সবাই সত্য নবী এবং আল্লাহর প্রিয় পাত্র। যদি তাই হয় তাহলে ইহুদীদেরকে মানে মুসা(আঃ) এর অনুসারীদেরকে আমাদের মোল্লা – মৌলানারা কাফের বলে কিভাবে?
ইহুদীদেরকে মানে মুসা(আঃ) এর অনুসারীদেরকে আমাদের মোল্লা – মৌলানারা কাফের বলে কিভাবে?
যদি আমাদের মোল্লা- মৌলানাদের কথা সত্য হয়; তাহলে কুরআনের কথা মিথ্যা (নাউজুবিল্লা) । কুরআনের কথা মিথ্যা হতে পারেনা। ইহুদীরাই মিথ্যা হয়ে গেছে, ,তারা একসময় সত্য ও সঠিক পথের অনুসারী ছিল;তারা তাদের নবী হযরত মুসা(আঃ) এর ভবিষ্যৎ বানী অনুযায়ী ঈসা(আঃ)কে মান্য করেনি, তারা সত্যকে পায়ে ঠেলে মিথ্যা কে আঁকড়ে ধরে আছে। ইহুদিরা বাপ-দাদার ধর্মকে সত্য মনে করছে আর আল্লাহ প্রিয় নবী হযরত ঈসা (আঃ ) কে ভণ্ড, প্রতারক ও জাদুকর বলে গালাগালি দিচ্ছে । হযরত ঈসা (আঃ) কে বেশি অপদস্থ করেছে তৎকালীন ইহুদি ধর্মের হর্তা – কর্তারা । ইহুদি মৌলানারা ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ( একত্ববাদ ) ভুলে গিয়ে সত্য নবী হযরত ঈসা (আঃ) এর বিরোধিতা করেছে; এখনও করছে।
ইহুদি ধর্মের নেতারা সাধারণ ইহুদিদেরকে বাপ-দাদার ধর্মে আঁকড়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যারা এ নির্দেশ উপেক্ষা করে, অমান্য করে হযরত ঈসা (আঃ) কে মান্য করেছে,অনুসরণ করেছে; তাদের উপর ইহুদি সমাজপতিরা চালিয়েছে- শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক নির্যাতন। যা ছিল সত্যর উপর জুলুম। এই অত্যাচারের ফল ভোগ করেছে ইহুদিরা; এক হিটলারই বুঝিয়ে দিয়েছে অত্যাচার কত প্রকার ও কি কি। একটি আঘাত সহস্র আঘাত হয়ে ফিরে এসেছে ইহুদীদের উপর। যা ছিল পূর্বসূরিদের পাপের ফল বা মৌলবাদের বিচার। আর একারণেই আমাদের মোল্লা – মৌলানারা তাদেরকে কাফের বলতে পারে।
ইহুদি সমাজপতিদের রক্তচক্ষু কে ভয় না করে যারা বাপ-দাদার ধর্ম কে পায়ে ঠেলে হযরত মুসা (আঃ) এর ভবিষ্যৎ বানীর সত্যতা উপলব্ধি করে হযরত ঈসা (আঃ) এর ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল – তারাই মূলত প্রকৃত ইহুদি ও সত্যিকারের মুসা ভক্ত।
আর যারা হযরত ঈসা (আঃ) কে অনুসরণ না করে হযরত মুসা (আঃ) এর প্রেমিক, আল্লাহ প্রেমিক হতে চেয়েছিল তারা আসলে ভণ্ড, কপট ও সমাজ-পূজারি। তারা ধর্মের নামে বিজনেস শুরু করে দিয়েছে; তাই তারা আল্লাহর সত্যি নবী হযরত ঈসা (আঃ) কে চিনতে পারেনি অথবা চিনেও না চেনার ভান করছে- ধর্ম বিজনেস এ লস হবে বলে। আজও তারা হযরত ঈসা (আঃ) কে গালাগালি করে। খ্রিস্টানদেরকে তারা নাসারা নামে ডেকে অপমান করে।
কেন অন্য ধর্মাবলম্বীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল ?
আর যারা ইহুদি ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টীয় ধর্ম গ্রহণ করেছিল, তারা জীবন্ত খোদার সত্য নবী কে মেনে ; সত্য ধর্মের অমৃত গ্রহণ করেছে। দুনিয়াবি লোভ- লালসা তাদেরকে আকৃষ্ট করেনি ; ইহুদিদের সব অত্যাচার তারা সহ্য করেছে খোদার প্রেমে মশগুল হয়ে। এখন আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন- বাপ- দাদার ধর্মই প্রকৃত সত্য ধর্ম নয়; সত্য ধর্ম হলো – কালের স্রোতধারায় আগত – যা পূর্বের নবীর ভবিষ্যৎ বানীর সত্যতার নিদর্শন। এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন- মুসা (আঃ) এর মতেই ইহুদিরা অচল ধর্ম পালন করছে। এ ধর্মে পুণ্য শূন্য হলেও ধর্ম নিয়ে যারা বিজনেস করছেন তাদের পকেটে ঠিকি লাভ ঢুকতেছে। আর বাপ-দাদার ধর্মকে টিকিয়ে রাখতে নানান রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ ইহুদিদেরকে মিথ্যা ধর্মের গোলাম বানিয়ে রাখছে।
তাহলে আমরা খৃষ্টানদেরকে কাফের বলি কেন? খৃষ্টানদেরকে আমরা কাফের বলি এজন্য যে- তারা আল্লাহর একত্ববাদ ভুলে ত্রিত্ববাদে লিপ্ত হয়ে গেছে; দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে ধর্মকে নোংরা করে ফেলেছে।
তারাও ইহুদীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। তারা হযরত ঈসা (আঃ) এর শিক্ষা, আদেশ, উপদেশ, ও নির্দেশ ভূলেগিয়ে দুনিয়াবি সুখে লিপ্ত হয়ে ইহুদিদের মতো অন্ধ হয়ে গেছে; সত্য হতে তারা যোজন-যোজন মাইল দূরে সরে গেছে। তারা তাদের নবীর আদেশ ও ভবিষ্যৎ বানীর সত্যতা যাচাই না করেই আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কঠোর বিরোধিতা করেছে।
ইসলাম ধর্মের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিয়েছে ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রধানরা, খৃষ্টান পাদ্রী ও পৌত্তলিক নেতারা । তারা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদের উপর কঠোর অত্যাচার চালিয়ে বাপ-দাদার ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে চেয়েছিল কিন্তু বিধি বাম। ইসলাম ধর্মের আলো ছড়িয়ে সারা জাহানে। দলে দলে লোক বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে যুগের সত্য ধর্ম ইসলামের অমৃত স্বাদ গ্রহণ করল। এখানেও প্রমাণিত, বাপ-দাদার ধর্মই প্রকৃত সত্য ধর্ম নয়; কালের স্রোতধারায় আগত ধর্মই সত্য। এ ধর্মকে চেনার নামই মুত্তাকী, মুমিন।
সত্য ধর্মের লক্ষণঃ
- মিথ্যা ধর্মের নেতারা ও সমাজ-পূজারীরা এর বিরোধিতা করে।
- ধর্ম গ্রহণে বাধা প্রধান করে।
- শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক অত্যাচার
এখন আমাদের উপর দায়িত্ব বর্তেছে যুগের সত্য ধর্মকে চেনার। আমরা কত দল-উপদলে বিভক্ত। কোন দল সঠিক আমরা সাধারণ মুসলমানরা কিভাবে বুঝব? শিয়া, সুন্নি, হাম্বলি, মালেকি, হানাফি আরও কত দল।
কোন দল সঠিক কে আমাদের বলে দিবে? কে আমাদের দেখাবে সঠিক পথ তার প্রতীক্ষায় রইলাম
আপনার পছন্দের আরো একটি পোস্ট পড়ুন:
আইয়ামে জাহেলিয়াত বনাম আধুনিক বিশ্ব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ভদ্রতা ও শালীনতার সহিত মতামত দিন